• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১

মহাখালীর কুখ্যাত "ভাতিজা বাহিনী" এখন বিএনপিতে ভিড়তে মরিয়া


FavIcon
নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২, ২০২৪, ০২:০৯ পিএম
মহাখালীর কুখ্যাত

রাজধানীতে মহাখালী কমিউনিটি সেন্টার মার্কেটের পাশে একটি ক্লাব রয়েছে। যা ছিল বনানী থানা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ২০নং ওয়ার্ডের সদ্য সাবেক কাউন্সিলর মোঃ নাছিরের টর্চার সেল। নাছিরের কথা মতো যারা কাজ করতো না এবং তার লোকজনকে চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানাতো তাদের এই ক্লাবে ধরে এনে নির্যাতন করা হতো। ভয়ভীতি দেখানো হতো। এই ক্লাব নিয়ন্ত্রণ করতো নাছিরের ভাতিজা গ্রুপ নামে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী। তবে এক সময় নাছিরের আগে পিছে ঘুরে বেড়ানো ভাতিজারা এখন অভিভাবক, দল পরিচয় পরিবর্তনে মরিয়া হয়ে উঠেছে। 

উদ্বেগের বিষয় হলো ইতিমধ্যে এদের অনেকেই বিএনপি'র মিছিলে যোগ দিয়ে নিজেকে বিএনপি'র কর্মী হিসেবে প্রমাণ করতে স্বার্থক হয়েছে। স্থানীয় বিএনপি নেতারাও এদের সঙ্গে নিয়ে দল ভারী করছে। যে কারনে এতো দিন মামলা-হামলা শিকার, জেল খাটা ও নির্যাতন সহ্য করা ত্যাগী বিএনপি নেতাদের মধ্যে চরম ক্ষোভ-হতাশা বিরাজ করছে। তাদের ভাষ্যমতে এতো দিন এসব অতিথি পাখিরা কোথায় ছিল! 

স্থানীয় বিএনপি কর্মীদের অভিযোগ, কাউন্সিলর নাছিরের এই ভাতিজা বাহিনী এক সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের ধরাও-পাকরাও করাতে পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করেছে। এছাড়া বিএনপি'র কোন কোন নেতাকর্মী এলাকায় অবস্থান করছে, কারা পলাতক ছিল, টিবি গেট এলাকায় অবস্থিত এলাকা ভিত্তিক সামাজিক সংগঠন (বিএনপি নেতাকর্মী দ্বারা পরিচালিত) “মহাখালী সপ্তর্ষি সংসদ” এ কারা নিয়মিত আসা-যাওয়া করতো সব তথ্য ভাতিজা বাহিনী কাউন্সিলরের শেলক রাসেল সরদার সুমনের কাছে আদান-প্রদান করতো। পরবর্তীতে বিএনপি নেতাকর্মীদের কিভাবে ক্ষতি করা হবে কাউন্সিলর নাছিরের নির্দেশে তার ছক কষা হতো মহাখালী কমিউনিটি সেন্টারের নিচের এই ক্লাবে বসে। শেলক সুমনের নেতৃত্বে সকল পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতো ভাতিজা বাহিনী। 

ভাতিজা বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পায়নি সাংবাদিকরাও। কাউন্সিলর নাছির ও তার লোকজনদের অপকর্মের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় অপরাধ বিচিত্রার সাংবাদিক হাবিব সরকার স্বাধীনকে তুলে এনে ক্লাবের ভিতর আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন করেছিল ভাতিজা বাহিনী। যার নেতৃত্ব ভাতিজা বাহিনীর অন্যতম সদস্য নাপিত সবুজ। পরে স্থানীয় সাংবাদিকরা খবর পেয়ে বনানী থানা পুলিশের সহযোগিতায় মুমূর্ষু অবস্থায় স্বাধীনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। এই ঘটনায় নাছিরের প্রভাবের কারণে মামলা নেয়নি বনানী থানা পুলিশ। পরে আদালতে মামলা দায়ের করেন স্বাধীন। যা পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। সেখানেও নাছির আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে তদন্ত কার্যক্রমে বাধাগ্রস্ত করে। 

সদ্য অনুষ্ঠিত বিএনপি'র ক'টি মিটিং মিছিলে দেখা গেছে, সেই ভাতিজা বাহিনীর কিছু তেলবাজ সদস্যদের লোক দেখানো খাতিরের লোভ সামলাতে না পেরে দল ভারী করার জন্য বুকে টেনে নিচ্ছে বিএনপি'র এক পক্ষের নেতারা। অথচ এই ভাতিজা বাহিনী এক সময় তাদের ক্ষতি করেছে। পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছে।

খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, ভাতিজা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে ভাতিজা জুয়েল ওরফে রকার জুয়েলের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছিল চোখে পড়ার মতো। বিএনপি কর্মীদের ভাষ্যমতে জুয়েলের যেখানে এখন পালিয়ে বেড়ানোর কথা সেখানে উল্টো সে ছাত্রদলের একজন ত্যাগী কর্মী হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে নেতাদের আগেপিছে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সে নিজেকে এখন ছাত্রদল নেতা মোঃ নাঈম উদ্দিন মিজবাহ এর কাছের লোক হিসেবে দাবি করছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জুয়েলের ক'জন বন্ধু-বান্ধবরাই এসব তথ্য দিয়েছে। তথ্য এসেছে, হাসান মাহবুব নামক এক নেতা জুয়েলকে ছাত্রদলে অনুপ্রবেশ করতে সহযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, জুয়েল ছাড়াও ভাতিজা বাহিনীর আরেক কুখ্যাত সদস্য আহসানুল হাসান ইমন ওরফে টকলা ইমন। যার নেতৃত্বে মহাখালী 'জ' ব্লকে একটি কিশোর গ্যাং পরিচালিত হয়। এই গ্যাং-এর বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর অভিযোগের শেষ নেই। তারা দল বেঁধে মহল্লার মোড়ে মোড়ে আড্ডা দেয়। ইভটিজিং করে, প্রকাশ্যে মাদক সেবন করে। কেউ প্রতিবাদ করলে দলবেঁধে তাকে মারধর অমানবিক নির্যাতন করে। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিদিনই অন্য এলাকার কিশোর গ্যাং-এর সাথে তাদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে।
শুক্রবার (৩০ আগস্ট) বিকেলে এদের একত্রে কমপক্ষে ত্রিশ জনকে মহল্লায় লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিতে দেখা যায়। এনিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এলাকাবাসী।
সম্প্রতি এই কিশোর গ্যাং-এর এক সদস্যর বিরুদ্ধে দেওয়ানগঞ্জ মডেল থানায় অপহরণ ও বনানী থানায় প্রতারণার লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এছাড়া অন্যদের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে এলাকাভিত্তিক বিচার সালিশের ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে। 

কিছুদিন আগেও ভাতিজা বাহিনীর সদস্যরা আওয়ামী লীগ নেতাদের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে অভিভাবক দাবি করে ক্যাপশন দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড দিতো। বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, মিটিং মিছিলে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে তোলা ছবিতে তাদের ফেসবুক আইডি ছিল সয়লাব! পরিস্থিতি বদলে যাওয়ার সাথে সাথে তারা পুরোনো সেসব ছবি ডিলিট করে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে ছবি তুলে শেয়ার করছে। যদিও বিএনপি'র কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দরা এধরনের অনুপ্রবেশকারীদের দলে ভিড়ানোর বিষয়ে সতর্ক থাকতে বারবার নির্দেশ দিচ্ছে। 


Side banner
Link copied!